ঋণ তো শোধ হয়ে গেল কিংবা যাচ্ছে,,, তাহলে কি আরো শ্রদ্ধা সম্মানের দরকার আছে ??
লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ০৪ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৪১:১১ সকাল
হয়তোবা ইতিহাসে
তোমাদের নাম লেখা রবে না
বড় বড় লোকেদের ভিড়ে
জ্ঞানী আর গুণীদের আসরে
তোমাদের কথা কেউ কবে না,
তবু হে বিজয়ী বীর মুক্তি সেনা
তোমাদের এই ঋণ
কোনদিন শোধ হবে না ।।
.......
আপাত দৃষ্টিতে এটা অন্যান্য গানের মত একটা সাধারণ গান মনে হলেও,, এর একটা গভীর তাৎপর্য আছে।
.
এর একদিকে আছে অভিমান,,, অন্যদিকে আছে হৃদয়ের ভিতর থেকে গভীর শ্রদ্ধাবোধ।
.
গানের লেখক,গীতিকার বা সুরকার কে আমি জানি না,, কোন পরিচয়ও নেই তাদের সাথে। তবে তাদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটা আমি অনুভব করতে পারি।
.
অভিমানটা ছিল আমাদের প্রতি, বাঙালি জাতির প্রতি।
.
লেখক হয়তো ভেবেছিলেন পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাসে মুক্তিসেনাদের কথা আসবে না কিংবা আসলেও যেভাবে আসা উচিৎ সেভাবে আসবে না।
.
বড় বড় লোকেরা অর্থাৎ বুদ্ধিজীবীরা যখন আসর জমাবেন, টিভি টকশো, বক্তৃতা, বিবৃতি করবেন, ফেসবুকে লেখালেখি করবেন তখন এই মুক্তি সেনারা উপেক্ষিত থেকে যাবেন।
.
অর্থাৎ আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না তাদের ঋণ শোধ করা। তাদের অবদানের মূল্য দেয়া।
.
তাই লেখকের লেখায় ফুটে উঠেছে আমাদের অপারগতা। আর এই অপারগতার দরূণ সারাজীবন জাতি মুক্তিসেনাদের কাছে ছোট হয়ে থাকবে, কখনো তাদের কথা শুনলে হয়তো শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নুয়ে আসবে, তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করলে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হবে, ঋণ শোধ করতে না পারার এক গভীর বেদনা বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠবে।
.
কিন্তু গান লেখকের ধারণার মধ্যে কিছুটা ভুল ছিল। কিছুটা না বরং পুরোটাই ভুল ছিল। আমাদের সামর্থ্য সম্পর্কে তার মন কল্পনাই করতে পারে নাই।
.
আমাদের ইতিহাস মানেই মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস। পেপার পত্রিকা, বই পত্রে শুধু তাদের কথাই ।
.
জ্ঞানী গুণীদের আসর মানেই মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধা, টিভি টকশো, বক্তৃতা বিবৃতি এমনকি হালের ফেসবুক ব্লগ ইত্যাদি সব কিছুতেই শুধু তাদেরকেই স্থান দিয়েছি।
.
তাদের ছেলে মেয়ে শুধু না, তাদের নাতী নাতনীদের জন্যেও দিয়েছি আলাদা কোঠা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরি, বিসিএস কোথায় রাখিনি তাদের জন্য এক্সট্রা সুযোগ সুবিধা।
.
সুতরাং মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ তো শোধ হয়ে গেল কিংবা যাচ্ছে। তাহলে তাদের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ এটা কি থাকবে নাকি না থাকলেও চলবে।
.
হয়তো নাই। তাই এখন আর কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় না, নিজের আসন ছেড়ে দিয়ে বসতে বলে না, মাটিতে পা ঠুকিয়ে সেলুট করে না, অন্তর থেকে শ্রদ্ধা আসে না। শহীদ মিনারে ফুল দেয়া লাগে তাই দেয়,,,কিন্তু কারো চোখ আর এখন অশ্রুসিক্ত হয় না।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন